ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

আকলিমা কাদঁছে, যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনের স্বীকারে

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃPhoto 12.08.17

ছেলে বিমানবন্দরে ভাল চাকরী করে। দেখতে শুনতে অনেক ভাল। এমনটাই শুনিয়ে ২০১৫ সালে বিয়ের প্রস্তাব আসে আকলিমা পরিবারের। তখন আকলিমা ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা ওয়াছের আলী ভ্যানচালক। ভাল প্রস্তাব দেখে আগপিচ না ভেবে বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে মেয়ের পরিবার। সে লামা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড লাইনঝিরি গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াছের আলীর মেয়ে। যদিও বিয়ের পরে মেয়ের পরিবার জানতে পারে ছেলে রিক্সাচালক।

ঘটা করে সামাজিক ভাবে ২০১৫ইং সালের ২৫ ডিসেম্বর আকলিমার বিয়ে হয় কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বড় ভেওলা ইউনিয়নের ভেউলা মানিকচর গ্রামের মৃত নুর হোসেনের ছেলে কফিল আহম্মদের (২৬) সাথে। দাম্পত্য জীবন ৬/৭ মাস মোটামুটি সুখের হলেও প্রথমে টমটম গাড়ী ক্রয় ও পরে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে কফিল। মেয়ের সুখের কথা ভেবে বাবা ওয়াছের আলী ছেলের বড় ভাই কামাল উদ্দিন ও ভগ্নিপতি হেলাল উদ্দিন এর উপস্থিতিতে সম্পত্তি বিক্রয় করে জামাই কফিলকে দেড় লক্ষ টাকা দেয়।

২/৩ মাস পর কফিল আহাম্মদের আরো ১ লক্ষ টাকা দাবী করে। স্ত্রী টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলেন। শুরু হলো স্ত্রীর ওপর নির্যাতন। এতেও কোনো কাজ হলো না। ৭ মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রীকে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে আকলিমার সন্তান আনিকা জন্নাতের বয়স ৯ মাস। দরিদ্র বাবার বাড়ীতে খেয়ে না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় দিনতিপাত করছে আকলিমা।

যৌতুকের ১ লক্ষ টাকা দিতে না পেরে আজ স্বামী সংসার থেকে বঞ্চিত আকলিমা। নিরুপায় হয়ে স্বামী এবং তার বড় ভাই কামাল উদ্দিন ও ভগ্নিপতি হেলাল উদ্দিন ৩ জনকে আসামী করে লামা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক আইনের ৪ ধারায় মামলা করেন। মামলা নং সি.আর- ৮০/১৭, তারিখ- ১১ মে ২০১৭ইং। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামীদের সমন ইস্যু করেন। এদিকে জামিনে এসে আসামীরা পাল্টা হুমকি দমকি দিচ্ছে। তারা বলে যাই কিছু কর সংসার করতে হরে টাকা দিতে হবে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকলিমা বলেন, ‘আমি অনেক মার খেয়েছি, নির্যাতন সহ্য করেছি। সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে, কোনো দিন প্রতিবাদ করিনি। টাকার কাছে ভালবাসা এত অসহায় আমি আগে জানতাম না।

আকলিমা’র মা রাশেদা বেগম অশ্রুসিক্ত চোখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা গরীব। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলাম। আবারো চাওয়া ১ লাখ টাকা দিতে না পারায় যৌতুকের বলি হয়ে মেয়েকে ফিরে আসতে হলো আমার ঘরে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত স্বামী কফিল উদ্দিন ও তার বড় ভাই কামাল উদ্দিনের মুঠোফোনে কল দিলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। কফিল বলে যা হওয়ার আদালতে হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লামা উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, যৌতুৃক লোভী স্বামী কফিল উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে এক আকলিমার চোখে জল মুছে দিতে পারলে হাজারও আকলিমা শান্তিতে বাস করবে। বিজ্ঞ আদালত অসহায় আকলিমার কান্না বিচার অবশ্যই করবেন !

পাঠকের মতামত: